ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা যাচ্ছেন কোথায়?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৯
দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হওয়ার কারণে ভেনেজুয়েলা ছাড়ছেন দেশটির একাধিক নারী৷ ‘মিস ভেনেজুয়েলা'-র মতো প্রতিযোগিতার হাত ধরে যে নারীরা এতদিন কর্মসংস্থান পেতেন, অর্থনীতির পতনের ফলে সেই সুযোগ হারিয়ে যাওয়ায় দেশ ছাড়ছেন তারা৷
আসন্ন ‘মিস ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতায় চিলের প্রতিনিধিত্ব করবেন বছর ২৬-এর আন্দ্রেয়া ডিয়াজ৷ আন্দ্রেয়ার জন্ম ভেনেজুয়েলার শহর ভালেন্সিয়াতে হলেও প্রথমে পানামা ও পরে মেক্সিকো হয়ে চিলিতে আসেন তিনি৷ আপাতত সেখানেই তার বসবাস৷ কিন্তু যে দেশের মাটিতে প্রথম ব়্যাম্পে হাঁটতে শেখেন আন্দ্রেয়া, সেই ভেনেজুয়েলায় মডেলের চাহিদা কমতে থাকায় দেশত্যাগ করেন তিনি৷
কারাকাস শহরের রেডিও সঞ্চালক রাফায়েল ব্রিসেনোর মতে, নব্বইয়ের দশক থেকেই ভেনেজুয়েলায় বাড়তে থাকে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার চল৷ বিশেষ করে ‘মিস ভেনেজুয়েলা' শিরোপায় অংশগ্রহণে বাড়ে অল্পবয়সি নারীদের আগ্রহ৷ শুধু তাই নয়, ‘মিস ইউনিভার্স', ‘মিস ওয়ার্ল্ড' বা ‘মিস আর্থ'-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ভেনেজুয়েলার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকার ফলে, বিভিন্ন সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে নারীদের কর্মসংস্থানের নির্ভরযোগ্য উপায়৷
কিন্তু গত কয়েক বছরে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা৷ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাদ্যাভাব ও মুদ্রাস্ফীতি এড়াতে অন্য দেশে বাসা বাঁধছেন৷ অন্যান্য শিল্পের মতোই এতে ক্ষতিগ্রস্ত সৌন্দর্য্য জগতও৷ ফলে একের পর এক সুন্দরীরা পাড়ি দিচ্ছেন মেক্সিকো, কোলোম্বিয়া বা পর্তুগালে৷ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানা গেছে, জীবিকার খোঁজে এই নারীরা পাড়ি দিয়েছেন তুরস্ক বা ভারতের মতো দূরের দেশগুলিতেও৷
আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায় পর্তুগালের হয়ে মঞ্চে নামবেন এক ভেনেজুয়েলান নারী৷ এই প্রবণতার চিত্র আগেও ‘মিস আর্থ' প্রতিযোগিতায় দেখা গেছে যখন পেরু ও স্পেন, দুই দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করেন দুই ভেনেজুয়েলান নারী৷
পেরুর প্রতিনিধি, জেসিকা রুসো বলেন, ‘‘দেশ ছেড়েছি বলে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার স্বপ্ন আমি ছাড়িনি৷ আমার বয়স কম৷ আমি ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের ভালো হয় এমন কোনো কাজ করতে চাই৷''
অনেকে যদিও এই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে দেখছেন নারীর পণ্যায়ন হিসাবে, নারীদের রোজগারের নির্ভরযোগ্য উপায় হওয়ার কারণে এই সমালোচনা সেভাবে ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের কাছে গৃহীত হয় না৷
শুধু অর্থনৈতিক পতন নয়৷ সুন্দরী নারীদের দেশত্যাগের পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ৷ ভেনেজুয়েলায় থাকাকালীন আন্দ্রেয়া একটি ত্বক পরিচর্যা কেন্দ্রে যান৷ পরে দেখা যায়, পরিচর্যার বদলে তার মুখে দেখা দিয়েছে ফুসকুড়ি৷ ফলে কমতে থাকে মডেল হিসাবে ভেনেজুয়েলায় তার কাজের সুযোগ৷
নারীর সৌন্দর্যের মান কেমন হবে, সে বিষয়ে ভেনেজুয়েলার সৌন্দর্য শিল্পের অন্দরমহলে বাস করে কিছু বাঁধাধরা চিন্তা বা স্টিরিওটাইপ, যা ভাঙতে অক্ষম হলে নারীরা অন্য দেশে আশ্রয় নেন৷ অবশ্য চিলেতে আসার পর আন্দ্রেয়ার এই সমস্যা সমাধান হয়েছে৷ এখানে উন্নত মেকাপের ফলে সহজেই ঢেকে নিতে পারেন তিনি ত্বকের সব খুঁত৷
দুর্বল অর্থনীতি বা সামাজিক চাপ – একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করছেন সেই দেশের উঠতি তারকারা৷ এতে সেই দেশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত লাভবান হচ্ছে অন্যান্য দেশের সৌন্দর্য বাণিজ্য৷